শুক্রবার, মার্কিন পারসোনাল কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচার (PCE) সূচকের ফলাফল অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস অতিক্রম করতে ব্যর্থ হওয়ার পর মার্কিন ডলার আরও দরপতনের শিকার হয়েছে, যা ফেডারেল রিজার্ভকে এ মাসেই সুদের হার হ্রাসের আরও এক ধাপ কাছে নিয়ে এসেছে।
এখন সবকিছু নির্ভর করছে মার্কিন শ্রমবাজারের সংক্রান্ত প্রতিবেদনের উপর। বহু অর্থনীতিবিদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগস্ট মাসে নিয়োগদাতারা নতুন কর্মী নিয়োগে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি, যার ফলে বেকারত্বের হার প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এটি শ্রমবাজারের স্থবিরতার সরাসরি প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন যে আগস্টে প্রায় 75,000 নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বেকারত্বের হার বেড়ে 4.3%-এ পৌঁছাতে পারে। টানা চার মাস ধরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সংখ্যা 100,000-এর নিচে থাকলে তা 2020 সালের মহামারির পর থেকে সবচেয়ে দুর্বল ফলাফল হিসেবে চিহ্নিত হবে।
তবে কেবল প্রতিবেদনের ফলাফল বিবেচনা না করে এই পরিস্থিতির কারণগুলো বিশ্লেষণ করাও জরুরি। বিশেষজ্ঞরা একাধিক বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যার মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা অন্যতম। অনেক কোম্পানি, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো, সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কর্মী নিয়োগ সম্প্রসারণে দেরি করছে।
ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর অবস্থান শ্রমবাজারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এজন্যই শুক্রবার শ্রম দপ্তর থেকে প্রকাশিতব্য কর্মসংস্থান সম্পর্কিত প্রতিবেদন ফেডের নীতিনির্ধারকদের সেপ্টেম্বরের বৈঠকের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হবে। ইতোমধ্যেই ফেডের কয়েকজন কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ধীরগতির নিয়োগ প্রক্রিয়া এই বছর কমিটির প্রথম সুদের হার হ্রাস বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট কারণ হতে পারে। এই সপ্তাহে ট্রেডাররা ফেডের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বিশ্লেষণ চালিয়ে যাবেন, যার মধ্যে রয়েছেন সেন্ট লুইসের আলবার্তো মুসালেম, নিউইয়র্কের জন উইলিয়ামস এবং শিকাগোর অস্টান গুলসবী।
কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন, যার মাধ্যমে তিনি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও উপকরণের দেশীয় উৎপাদনকে প্রণোদিত করতে চান।
এছাড়াও, ফেডারেল আপিল কোর্ট ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ককে বেআইনি হিসেবে ঘোষণা করেছে ও উল্লেখ করেছে যে জরুরি আইন প্রয়োগ করে তিনি তার ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়েছেন। তবে, বিচারকরা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক বহাল রাখার অনুমতি দিয়েছেন। ফলে মার্কেটের ট্রেডাররা মার্কিন প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখবে।
আসন্ন ছুটির কারণে সংক্ষিপ্ত সপ্তাহে প্রকাশিতব্য অন্যান্য প্রতিবেদনের মধ্যে রয়েছে ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক আগস্টে পরিচালিত উৎপাদন এবং সেবা খাতের সমীক্ষা। বৃহস্পতিবার প্রকাশিতব্য সরকারি প্রতিবেদনে পণ্য ও সেবা খাতে জুলাই মাসের বাণিজ্য ঘাটতির তীব্র বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী শুল্ক বৃদ্ধির আগে আমদানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছিল।
বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র
EUR/USD: ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1715 লেভেল ব্রেক করাতে হবে। কেবল তখনই পেয়ারটির মূল্য 1.1750 লেভেল টেস্ট করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে। সেখান থেকে 1.1780-এর দিকে মূল্যের মুভমেন্টের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও বড় বিনিয়োগকারীদের সহায়তা ছাড়া এটি করা বেশ কঠিন হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1820 লেভেল। যদি এই পেয়ারের মূল্য মূল্য হ্রাস পায়, তবে আমি কেবলমাত্র মূল্য 1.1685 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় বড় ক্রেতাদের সক্রিয়তার প্রত্যাশা করব। যদি সেই লেভেলে কোনো ক্রেতারা সক্রিয় না হয়, তবে পুনরায় এই পেয়ারের মূল্যের 1.1655 লেভেলের টেস্ট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত হবে, অথবা 1.1630 থেকে লং পজিশন ওপেন করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
GBP/USD: পাউন্ডের ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যের নিকটতম রেজিস্ট্যান্স 1.3540 ব্রেক করাতে হবে। কেবল তখনই মূল্যের 1.3565-এর দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে, যার ব্রেকআউট করে উপরের দিকে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.3590। যদি পেয়ারটির মূল্য হ্রাস পায়, তবে মূল্য 1.3495 লেভেলে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। এই রেঞ্জ ব্রেক করা হলে তা ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে গুরুতর আঘাত হানবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্যকে 1.3470 লেভেলে নামিয়ে আনবে, যেখান থেকে 1.3440 পর্যন্ত দরপতন প্রসারিত হতে পারে।