বর্তমানে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বেড়েছে। ইয়েনের শক্তিশালী হওয়ার পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল ব্যাংক অব জাপানের ডেপুটি গভর্নর শিনিচি উচিদার হকিশ বা কঠোর অবস্থান, যেখানে তিনি সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রানীতির আরও স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাবনা উন্মুক্ত রেখেছেন। উচিদা বলেন, যদি অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়ে চলে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে। তিনি আরও বলেন, জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভাব্য মাত্রায় কিছুটা মন্থর হতে পারে, তবে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে আবারও মাঝারি হারে প্রবৃদ্ধি শুরু হবে। এই মন্তব্য ইয়েনের আকর্ষণীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে এবং এর মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
এদিকে, ট্রেডাররা ফেডারেল রিজার্ভের আগ্রাসী মাত্রায় সুদহার কমানোর প্রত্যাশা কিছুটা কমিয়ে এনেছে, যার ফলে ভবিষ্যতে হঠাৎ করে সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা এখন কম। তবুও, বিনিয়োগকারীরা এখনো বছরের শেষ নাগাদ প্রায় 56 বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত মার্কিন ভোক্তা মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনের দুর্বল ফলাফল এই প্রত্যাশাকে আরও জোরদার করেছে।
মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BLS) তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিক হেডলাইন CPI এপ্রিল মাসে 2.4% থেকে কমে 2.3%-এ নেমে এসেছে। কোর CPI (যা খাদ্য ও জ্বালানির মতো অস্থির উপাদান বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়) বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী এসেছে। এই পরিসংখ্যান মার্কিন ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং USD/JPY পেয়ারের উপরে থাকা ১১ এপ্রিলের সর্বোচ্চ লেভেলের নিচেই ডলারের মূল্যকে আটকে রেখেছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে 90 দিনের বাণিজ্য যুদ্ধের বিরতি এবং পারস্পরিক শুল্ক হ্রাসের খবরে সামগ্রিকভাবে মার্কেটে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের সঙ্গে "ভালো সম্পর্ক" থাকার ব্যাপারে মন্তব্যও এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ বিনিয়োগের (যেমন ইয়েন) প্রতি ব্যাপক আগ্রহের পরিবর্তে মার্কেটে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। তবুও, ব্যাংক অব জাপান ও ফেডারেল রিজার্ভের মধ্যে মুদ্রানীতিগত পার্থক্য স্বল্পমেয়াদে ইয়েনের পক্ষে আরও সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
সামগ্রিকভাবে, বর্তমান পরিস্থিতি USD/JPY পেয়ারের দরপতনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে—যা মূলত মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনের দুর্বল ফলাফল এবং বাণিজ্য উত্তেজনায় ইতিবাচক অগ্রগতির কারণে ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ফেডের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তাই, FOMC-এর প্রভাবশালী সদস্যদের বক্তব্য সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যা ডলারের মূল্যের দিকনির্দেশনা এবং এই পেয়ারের মূল্যের মুভমেন্টে প্রভাব ফেলতে পারে।
টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
দৈনিক চার্টে পজিটিভ অসসিলেটর ক্রেতাদের পক্ষে কথা বলছে। তাই 147.00 এর সাইকোলজিক্যাল লেভেলের নিচে যেকোনো কারেকশন 146.60–146.50 জোনে এই পেয়ার ক্রয়ের সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে এই রেঞ্জ ব্রেক করা হলে তা টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী মার্কেটে এই পেয়ার বিক্রয়ের প্রবণতা শুরু করতে পারে, যা USD/JPY পেয়ারের মূল্যকে 146.00-এর পরবর্তী রাউন্ড নম্বর এবং পরবর্তীতে 145.50 জোনের দিকে টেনে নিতে পারে, যা 145.00-এর গুরুত্বপূর্ণ সাইকোলজিক্যাল লেভেলের ঠিক আগে অবস্থুত। যদি 145.00 লেভেল ব্রেক করা হয়, তাহলে মোমেন্টাম বিক্রেতাদের অনুকূলে চলে যাবে।
অন্যদিকে, 147.65 এর লেভেল একটি রেজিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করছে, যার ওপরে রয়েছে 148.00 এর রাউন্ড লেভেল। মূল্য এই রেজিস্ট্যান্স অতিক্রম করলে পেয়ারটির মূল্য মাসিক সর্বোচ্চ 148.65-এর দিকে এগোতে পারে। এই লেভেলের ওপরে অতিরিক্ত ক্রয় হলে তা নতুন করে ক্রেতাদের জন্য সুযোগ হিসেবে কাজ করতে পারে।